Wellcome to National Portal
মেনু নির্বাচন করুন
Main Comtent Skiped

এসডিজি

এসডিজি (টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা) বাস্তবায়নে রয়েছে ৮৮ ধরনের ঝুঁকি। এগুলো মোকাবেলা করা না গেলে ১৭টি প্রধান লক্ষ্য অর্জন বাধাগ্রস্ত হতে পারে- এমন শঙ্কা প্রকাশ করেছে পরিকল্পনা কমিশনের সাধারণ অর্থনীতি বিভাগ (জিইডি)।                                                           

সম্প্রতি প্রকাশিত জিইডির এক প্রতিবেদনে এ শঙ্কা প্রকাশ করা হয়। এতে বলা হয়েছে, ইতোমধ্যেই পেরিয়ে গেছে চার বছর।

এর মধ্যে এসডিজি বাস্তবায়ন প্রক্রিয়ায় কোন কার্যক্রমগুলো ফলদায়ক হয়েছে সেগুলো চিহ্নিত করে সে অনুযায়ী ভবিষ্যৎ বাস্তবায়ন রূপরেখা নির্ধারণের সন্ধিক্ষণ চলছে এখন।

এজন্য কী কী ক্ষেত্রে অগ্রগতি এখনও প্রয়োজন এবং সেসব ক্ষেত্রে কী ধরনের ঝুঁকি বিদ্যমান তা চিহ্নিত করা হয়েছে। তবে ২০৩০ সাল নাগাদ এসডিজি অর্জনে এখনও এক দশক সময় রয়েছে।

বিগত সময়ের কাজের অভিজ্ঞতা এবং নীতির মধ্যে সমন্বয় আগামী বছরগুলোয় এসডিজি বাস্তবায়ন প্রক্রিয়ার দক্ষতা বৃদ্ধিতে সহায়ক হবে।

প্রতিবেদনটি তৈরির দায়িত্বপ্রাপ্ত জিইডির সদস্য (সিনিয়র সচিব) ড. শামসুল আলম যুগান্তরকে বলেন, ঝুঁকি বললে মানুষ ভিন্নভাবে বুঝে নিতে পারে। তাই এক্ষেত্রে কষ্টসাধ্য বিষয় বলাই ভালো।

তবে আমরা শুধু ঝুঁকি বা চ্যালেঞ্জই চিহ্নিত করিনি, পাশাপাশি সেসব মোকাবেলায় কী কাজ করতে হবে সে বিষয়ে সুপারিশও দিয়েছি প্রতিবেদনে।

ইতোমধ্যেই এসডিজি বাস্তবায়নে নানা উদ্যোগ এবং অনেক কাজই করা হয়েছে। যেগেুলো এসব ঝুঁকি মোকাবেলায় কাজে আসবে।

ড. আলম জানান, এর আগে ২০১৮ সালে এসডিজি অগ্রগতি প্রতিবেদন তৈরির পর বাস্তবায়ন প্রক্রিয়ায় আরও অনেক নতুন উদ্যোগ যোগ হয়েছে। এগুলো হল- মন্ত্রণালয়গুলো এসডিজি বাস্তবায়নে নিজস্ব কর্মপরিকল্পনা তৈরি করেছে।

চালু করা হয়েছে অগ্রগতি পরিমাপক। এসডিজি বাস্তবায়নে অর্থায়নের প্রয়েজনীয়তা নিরূপণসহ অর্থায়ন কৌশল নির্ধারণ করা হয়েছে। এসডিজির বাস্তবায়ন অগ্রগতি পর্যালোচনার জন্য প্রথম জাতীয় সম্মেলন সম্পন্ন হয়েছে।

উপাত্ত সমন্বয়ের জন্য জাতীয় কমিটি গঠন করা হয়েছে। সেই সঙ্গে দেশে জাতিসংঘের যেসব অঙ্গ সংস্থা কর্মরত তাদের সঙ্গে সরকারের সহযোগিতা কাঠামো প্রস্তুত করা হয়েছে। এসডিজি স্থানীয়করণের জন্য সরকার ৪০টি সূচক অনুমোদন করেছে। 

প্রতিবেদনটি পর্যালোচনা করে দেখা যায়, এসডিজির এথম গোল ‘দারিদ্র্য বিলোপ’-এর লক্ষ্য অর্জনের ক্ষেত্রে সাতটি ঝুঁকি চিহ্নিত করা হয়েছে। এছাড়া ‘ক্ষুধা মুক্তি’র ক্ষেত্রে ঝুঁকি রয়েছে নয়টি। ‘সুস্বাস্থ্য ও কল্যাণের’ ক্ষেত্রে চারটি। ‘অন্তর্ভুক্তিমূলক ও সমতাভিত্তিক গুণগত শিক্ষার’ লক্ষ্য অর্জনে রয়েছে চারটি ঝুঁকি।

‘জেন্ডার সমতা ও নারীর ক্ষমতায়নে’ আছে আট ঝুঁকি। ‘নিরাপদ পানি ও স্যানিটেশনে’ আছে চারটি। ‘সাশ্রয়ী, নির্ভরযোগ্য, টেকসই ও আধুনিক জ্বালানির’ ক্ষেত্রে ঝুঁকি চিহ্নিত হয়েছে পাঁচটি। ‘স্থিতিশীল, অন্তর্ভুক্তিমূলক ও টেকসই প্রবৃদ্ধি ও সোভন কাজের’ ক্ষেত্রে আটটি। ‘শিল্প উদ্ভাবন ও অবকাঠামোর’ ক্ষেত্রে পাঁচটি।

‘অসমতা হ্রাসে’ চারটি। ‘টেকসই শহর ও জনপদের’ ক্ষেত্রে সাতটি। ‘পরিমিত ভোগ ও টেকসই উৎপাদনে’ দুটি। ‘জলবায়ু কার্যক্রমে’ পাঁচটি। ‘জলজ জীবনের’ ক্ষেত্রে চারটি। ‘স্থলজ জীবনের’ ক্ষেত্রে তিনটি। ‘শান্তি, ন্যায় বিচার ও কার্যকর প্রতিষ্ঠানের’ ক্ষেত্রে ছয়টি এবং সর্বশেষ গোল ‘টেকসই উন্নয়নের জন্য বৈশ্বিক অংশীদারিত্ব অর্জনের ক্ষেত্রে তিনটি ঝুঁকি রয়েছে। 

এসডিজি বাস্তবায়নে নাগরিক প্ল্যাটফর্ম,বাংলাদেশের আহ্বায়ক ও সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) বিশেষ ফেলো ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য যুগান্তরকে বলেন, সামগ্রিকভাবে এসডিজির ১৬ নম্বর গোল অর্থাৎ প্রাতিষ্ঠানিক উন্নতি ও সুশাসনে অগ্রগতি না হলে উপরের ১ থেকে ১৫ নম্বর গোলের লক্ষ্য অর্জন বাধাগ্রস্ত হবে।

এসডিজি বাস্তবায়নে ঝুঁকি মোকাবেলা করতে হলে সুশাসন প্রতিষ্ঠা জরুরি। তবে গড়ে অনেক ক্ষেত্রে বাংলাদেশ অগ্রগতি অর্জন করলেও বিভাজিতভাবে দেখলে দেখা যাবে পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠী বিগত সময়ে খুব বেশি সুযোগ পায়নি।

এই জনগোষ্ঠীর মধ্যে রয়েছে দলিত, প্রতিবন্ধী, দুর্গম এলাকার নাগরিক এবং শহরের অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতের মানুষ।

আর যে বিষয়টিতে বিশেষ নজর দিতে হবে তা হল আমরা শিক্ষা ক্ষেত্রে এগিয়েছি, কিন্তু মানসম্মত শিক্ষা অর্জন হয়নি। আবার কর্মসংস্থান কিছুটা হয়েছে, কিন্তু শোভন কর্মসংস্থান হয়নি।

তাছাড়া গোল-১৭ অর্থাৎ টেকসই উন্নয়নের জন্য বৈশ্বিক অংশীদারিত্বের ক্ষেত্রে তৎপরতা বাড়াতে হবে।

সর্বোপরি করোনা মহামারীর কারণে নতুন দারিদ্র্য পরিস্থিতির সৃষ্টি হতে পারে। এ অবস্থায় নতুন করে কর্মপরিকল্পনা না নিলে এসডিজির অনেক লক্ষ্যই শেষ পর্যন্ত অর্জন হবে না। 

প্রতিবেদনে উল্লিখিত ঝুঁকিগুলোর মধ্যে কয়েকটি হচ্ছে-সম্পদ সংগ্রহ, বিশেষ করে বৈদেশিক উৎস থেকে সম্পদ সংগ্রহের ঝুঁকি রয়েছে। এছাড়া মধ্যম আয়ের ফাঁদ বাংলাদেশের জন্য অন্যতম বড় ঝুঁকি।

দেশে প্রায়সই বন্যা,খরা, ঘূর্ণিঝড়, শিলাবৃষ্টি অন্যান্য প্রাকৃতিক দুর্যোগ আঘান হানে। এসব দুর্র্যোগ দারিদ্র্য বিলোপের ক্ষেত্রে অন্যতম ঝুঁকি তৈরি করে।

প্রতি বছর শূন্য দশমিক ৫ শতাংশ হারে কৃষিজমি হারিয়ে যাওয়া। লবণাক্ততার কারণে জমির চাষযোগ্যতা নষ্ট হওয়া। দেশের উত্তরাঞ্চলের ৭০ শতাংশ মানুষ দারিদ্র্যের মধ্যে বসবাস করে।

তাদের অবস্থার উন্নতি ঘটানো। স্বাস্থ্য খাতের ঝুঁকিগুলোর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে- শিক্ষিত ও অশিক্ষিতের মানদণ্ড ও সম্পদের মালিকানার ভিত্তিতে স্বাস্থ্যসেবা প্রাপ্তিতে বৈষম্য।

প্রশিক্ষিত স্বাস্থ্যকর্মীর মাধ্যমে ধাত্রীসেবা প্রদান। শহরাঞ্চলে বিশেষ করে দরিদ্রদের মধ্যে প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবার সম্প্রসারণ। স্বাস্থ্যসেবার পেছনে রোগী ও তার পরিবারের ব্যয় কমানো।

ক্রমবর্ধমান হারে অগ্নিদগ্ধ ও এসিডে ঝলসে যাওয়া রোগী, পানিতে ডুবে মৃত্যু ও সড়ক দুর্ঘটনা মোকাবেলা এবং সংক্রামক রোগের বিস্তার রোধ করা। 

এছাড়া প্রাথমিক শিক্ষার বাইরে থাকা ৪০ লাখ শিশুকে স্কুল শিক্ষার আওতায় আনা অন্যতম একটি ঝুঁকি। ১১-১৫ বছর বয়সী শিক্ষার্থীদের স্কুলে ভর্তির ক্ষেত্রে অসমতা। গ্রাম ও শহরের মধ্যে অর্থনৈতিক বৈষম্য হ্রাস করা।

জেন্ডার সমতা ও নারীর ক্ষমতায়নের ক্ষেত্রে অন্যতম ঝুঁকি হচ্ছে-গৃহস্থালির সব অবৈতনিক কাজের বোঝা অসামঞ্জস্যপূর্ণ ও অবধারিতভাবে পরিবারের নারী ও কন্যা সদস্যের ওপর পতিত হওয়া।

বৈষম্য বিলোপ ও প্রতিরোধ করা। কর্মক্ষেত্রে হয়রানি ও সহিংসতা রোধ করা এবং জেন্ডার সংবেদনশীল উপাত্তের অভাব। টেকসই পানি সরবরাহ ও স্যানিটেশন নিশ্চিত করতে উৎসমুখেই দূষণ রোধ করার ঝুঁকি রয়েছে।